বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের নতুন দিগন্তে: প্রধান উপদেষ্টা ও ইউনান গভর্নরের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক।
ঢাকা, ২১ এপ্রিল — বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ, আরও বাস্তবমুখী ও সহযোগিতাপূর্ণ করার আহ্বান জানিয়ে আজ এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস এবং চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবো। রাজধানীর স্টেট গেস্ট হাউজ যমুনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে নানা বিষয়ে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি উঠে আসে।
“আমরা এত কাছে, তবু যেন অনেক দূরে—এই ব্যবধান ঘুচাতে হবে,” গভর্নর ইউবোকে স্বাগত জানিয়ে এমন আবেগঘন মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনুস। তিনি বলেন, “আপনার এই সফর আমাদের জন্য এক নতুন সূচনা। আমরা ভালো প্রতিবেশী হতে চাই, বরং বলব—ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হতে চাই।”
সম্প্রতি চীন সফরের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনুস বলেন, সেই সফর দুই দেশের সম্পর্কের বাঁকবদলের একটি বড় অধ্যায়। তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
গভর্নর ইউবোও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। “দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ইউনান একটি উন্মুক্ত কেন্দ্র হতে প্রস্তুত,” বলেন তিনি। এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় উঠে আসে যুব বিনিময়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, গভর্নর ইউবো জানান, ইউনানের একটি চীনা ব্যাংক ইতোমধ্যেই অধ্যাপক ইউনুসের উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণ মডেল অনুসরণ করছে, যা চীনের বহু নাগরিককে উপকৃত করছে। দুই দেশের মধ্যে সামাজিক উন্নয়ন লক্ষ্যে এই সাদৃশ্য প্রশংসিত হয় বৈঠকে।
গভর্নর প্রস্তাব দেন—পেশাগত প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল শিক্ষা, ভাষাশিক্ষা এবং সামুদ্রিক মাছ, আম ও কৃষিপণ্যের মতো খাতে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য। তাঁর মতে, “মানুষে-মানুষে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে—এর মাধ্যমেই আমাদের অঞ্চলগুলোকে কাছাকাছি আনা সম্ভব।”
অধ্যাপক ইউনুস সকল প্রস্তাবনায় একমত পোষণ করে বলেন, “আপনার প্রতিটি প্রস্তাবই সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয়। স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে শিক্ষা ও বাণিজ্য—সবখানেই দ্রুত অগ্রগতি চাই। আমরা শুধু অংশীদার নয়, প্রকৃত বন্ধু হতে চাই।”
বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে স্বাস্থ্যখাত। বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চীনের কুনমিং শহরের চারটি হাসপাতাল নির্ধারণের উদ্যোগকে অধ্যাপক ইউনুস ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন অধ্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
শিক্ষা বিনিময়ের প্রসঙ্গেও দুই পক্ষ একমত হন। বর্তমানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করছে, তবে এই সংখ্যা বহুগুণে বাড়ানোর ঘোষণা দেন অধ্যাপক ইউনুস। “আমাদের যুবসমাজকে চীনে পাঠাবো, ভাষা শিখাবো, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ঘটাবো,” বলেন তিনি।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তিতে দাঁড়িয়ে এই বৈঠক হয়ে উঠেছে ভবিষ্যতের বন্ধন দৃঢ় করার এক নিখুঁত উদাহরণ।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি কো-অর্ডিনেটর ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ।