নারী ক্রীড়ায় নতুন দিগন্তের সূচনা: কাতার সফরে আশার আলো।
দোহা, ২৪ এপ্রিল ২০২৫:
বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদদের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো কাতারে। কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানির সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিয়ে দেশের চারজন শীর্ষস্থানীয় নারী ক্রীড়াবিদ পেলেন নতুন অনুপ্রেরণা ও আশার বাণী। কাতার সফররত প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে উঠেছে।
বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার, ফুটবলার শাহিদা আক্তার রিপা, ক্রিকেটার সুমাইয়া আকতার এবং শারমিন সুলতানা। তাঁরা প্রত্যেকে তুলে ধরেন দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে নারী খেলোয়াড়দের বাস্তবতা, সীমাবদ্ধতা এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন। শেখ হিন্দ, যিনি নিজেও একজন সাবেক ক্রীড়াবিদ, মনোযোগ দিয়ে তাঁদের কথা শোনেন এবং আবেগাপ্লুত হয়ে বাংলাদেশের নারী ক্রীড়ার পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন।
শেখ হিন্দ জানান, বাংলাদেশে নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি বিশেষ ফাউন্ডেশন গঠনে কাতার ফাউন্ডেশন সহায়তা করবে, যেখানে প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, ক্যারিয়ার ট্রানজিশন এবং আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এই ঘোষণা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষত নারীদের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
আফিদা খন্দকার বলেন, “আমাদের সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল কাতারের কাছে বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াঙ্গনের চিত্র তুলে ধরা। আমরা সেটি সফলভাবে করতে পেরেছি বলে মনে করছি।” তিনি আরও জানান, কাতারের আধুনিক স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং এমন সুবিধা বাংলাদেশেও গড়ে তোলার প্রত্যাশা করছেন।
শাহিদা আক্তার রিপা জানান, “হিন্দ আমাদের কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আমরা জিম ফ্যাসিলিটিজ, অবসর জীবনে ক্যারিয়ার বিকল্প এবং ট্রেনিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিয়ে কথা বলেছি।” তিনি বলেন, “এই সফর আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে—আমরা কেমন সুযোগ পেতে পারি তা দেখতে পেয়েছি।”
ক্রিকেটার সুমাইয়া আকতার বলেন, “কাতার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যে আন্তরিকতা দেখেছি, তা সত্যিই অভাবনীয়। আমরা হিন্দকে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলা দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছি, তিনি আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।”
শারমিন সুলতানার মতে, “বাংলাদেশের নারী খেলোয়াড়দের নিজস্ব খেলার মাঠ ও মেডিকেল সাপোর্ট দরকার। হিন্দ আমাদের ফিজিওথেরাপিস্ট ও ট্রেইনার হিসেবে ভবিষ্যৎ গড়ার প্রশিক্ষণের আশ্বাস দিয়েছেন, যা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক।”
এই সফরের মাধ্যমে শুধু নারী ক্রীড়াবিদদের কণ্ঠই নয়, তাঁদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনাও পৌঁছে গেছে আন্তর্জাতিক পরিসরে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের এই উদ্ভাবনী ভূমিকা ও কাতার ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াঙ্গনের দীর্ঘদিনের অবহেলিত স্বপ্নগুলো এবার বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে—এটি আর কেবল আশার গল্প নয়, এটি বাস্তবায়নের পথে দৃপ্ত পদক্ষেপ। এখন প্রয়োজন সরকারের সক্রিয় সহায়তা এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্পন্সরশিপে এগিয়ে আসা, যাতে এই অগ্রযাত্রা স্থায়ী হয় এবং নতুন প্রজন্মের মেয়েরা খেলাধুলাকে তাদের ভবিষ্যৎ হিসেবে বেছে নিতে পারেন গর্ব নিয়ে।