নীরব ঘাতক: অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ছায়ায় পৃথিবী।
বিশেষ প্রতিবেদন | নবজাগরণ ডেস্ক।
পৃথিবী আজ এক অদৃশ্য অথচ মারাত্মক মহামারির মুখোমুখি। এর নাম— অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে এই সংকট, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক মহাসংকট হিসেবেই চিহ্নিত হচ্ছে।
এক সময় যেসব ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ সহজেই প্রতিরোধ করা যেত অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে, আজ সেসব জীবাণুই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এতটাই শক্তিশালী যে, পরিচিত অ্যান্টিবায়োটিক আর তাদের বশে আনতে পারছে না। এই ভয়ংকর বাস্তবতাই 'অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স' নামে পরিচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্যমতে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এখন মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য অন্যতম বড় হুমকি। ২০১৯ সালের তথ্য বলছে, এই একটিমাত্র কারণে সরাসরি প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ। আর পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ লক্ষ মৃত্যুতে জড়িয়ে আছে এই নীরব ঘাতক। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবস্থা আরও শোচনীয়; অকারণে কিংবা ভুল ব্যবহারে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ এই সংকটকে ত্বরান্বিত করছে।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে?
অযথা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধের ব্যবহার, পশুপালন ও কৃষিতে নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ—এসব কারণেই জীবাণুদের মাঝে জন্ম নিয়েছে ভয়ংকর প্রতিরোধক্ষমতা। এক সময়ের জীবনরক্ষাকারী ওষুধ আজ অনেক ক্ষেত্রেই পরাজিত। চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন জটিল সংক্রমণের চিকিৎসায়।
এ যেন নিঃশব্দে এগিয়ে আসা এক সর্বনাশ, যার অভিঘাত অনুভব করা শুরু হলেও প্রতিরোধের উদ্যোগ এখনও যথেষ্ট নয়। গবেষকরা সতর্ক করছেন— যদি এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে চিকিৎসার জগতে আমরা ফিরে যেতে পারি প্রাক-অ্যান্টিবায়োটিক যুগে, যেখানে একটি সাধারণ সংক্রমণও হতে পারে মৃত্যুর কারণ।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন দরকার সচেতনতা, সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং গবেষণায় আরও বিনিয়োগ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র—সবাইকে সমান দায়িত্ব নিতে হবে এই নীরব মহামারির বিরুদ্ধে।
স্মরণে রাখার মতো কথা—
একটি অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, হয়তো ভবিষ্যতে কাউকে তার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধের কার্যকারিতা হারানোর ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সময় এসেছে, দায়িত্বশীল হওয়ার। এখনই।