আমার আয়ের গল্প: একটি ছোট উদ্যোগ থেকে স্বনির্ভরতার পথচলা
আমি গ্রামের ছেলে। চোখের সামনে দেখেছি কিভাবে অনেক মানুষ ভালো আয় করেও ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়ে, কিস্তির চাপ সামলাতে না পেরে বাড়ি তালা দিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। তখনই সিদ্ধান্ত নেই—আমি জীবনে কখনো সুদের ঋণ নেব না। আমি বিশ্বাস করি, অন্যায় করে, ফাঁকি দিয়ে বড় হওয়া যায় না। সততা, পরিশ্রম আর কৌশলের মধ্য দিয়েই সফলতা সম্ভব।
২০২৩ সাল। ব্যবসা করার স্বপ্ন নিয়ে আমি আমার মায়ের কাছ থেকে ৪ মন রসুন নিই। আগে থেকেই বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখতাম, নতুন রসুন উঠলে দাম কমে, আর লাগানোর আগ মুহূর্তে দাম বেড়ে যায়। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমি বড় আকারের, ভালো মানের রসুন মজুত করি এবং সঠিক সময়ে বিক্রি করে ৪০,০০০ টাকা লাভ করি। সেই টাকায় আমাদের বাড়ির প্রাচীর নির্মাণ করা হয়।
পরবর্তীতে, নতুন মৌসুমে মা আবার আমাকে রসুন দেন। মেপে না দেওয়া হলেও আমি হিসেব করি, রসুন কিছুটা শুকিয়ে গিয়ে ৪ মন থেকে ২৮ কেজি কমে যায়। এরপর সেই রসুন বিক্রি করে পাই ৩২,৬০০ টাকা।
এভাবে আমি ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠি। পরের বছর আমি ১১ মন রসুন কিনি। সংরক্ষণের অভাবে তা শুকিয়ে কমে ৮ মনের মতো হয়। সেই ৮ মন রসুন একসাথে বিক্রি করে পাই ৮০,০০০ টাকা। তবে চ্যালেঞ্জ ছিল গাড়ি ভাড়া। তখন আমার বাবার সঙ্গে সুযোগ বুঝে নিজের রসুনও পাঠাতাম, বাবাই ভাড়া দিতেন। স্কুলে যাওয়ার জন্য বাবা যে সাইকেলটি কিনে দিয়েছিলেন, সেটি দিয়েই আমি ২০, ২৮ বা ৪০ কেজি রসুন নিজের কাঁধে করে বাজারে নিয়ে যেতাম, বিক্রি করে ফিরতাম।
একটু একটু করে বুঝতে পারি, শুধু ব্যবসা নয়, কৃষির ভেতরেও ভালো সম্ভাবনা আছে। তখন আমার মাথায় আসে—যদি জমি লিজ নিয়ে নিজেই চাষবাস করি, তাহলে আরেকটা পথ খুলে যাবে। আমার সঞ্চিত অর্থ থেকে আমি ১ বিঘা জমি লিজ নিই। শুরু করি ধান চাষ দিয়ে। এরপর করি পেঁয়াজ চাষ, আর পরে পাট। সব ক্ষেত্রেই আমি পরিশ্রম করি, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিই, আর ফলস্বরূপ পাই ভালো লাভ।
আমি এমন এক পরিবারে বড় হয়েছি, যেখানে আমার বাবা কৃষি করতেন। আমি ছোট থেকেই দেখতাম, কোন সময় কোন ফসলের দাম বাড়ে বা কমে। কিভাবে বাজার ওঠানামা করে। চাষাবাদের কিছু প্রাথমিক ধারণা ছিল আমার। আর গ্রাম, মাঠ, সবুজ আর মাটির প্রতি ভালোবাসা আমাকে কৃষির প্রতি আরও টান দিত।
আমি কখনোই কাউকে ঠকিয়ে, অন্যায় করে কিছু অর্জন করিনি। বরং এমন কৌশল অবলম্বন করেছি যাতে কারো ক্ষতিও না হয়, আমারটাও চলে। আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃত উন্নতি আসে ধৈর্য, সততা, আর বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে।