Top News

মুরগি থেকে মানুষে ছড়াবে না তো? বার্ড ফ্লু নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা।

 




বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব: বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে নতুন আতঙ্ক: 

যশোরের একটি সরকারি মুরগির খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ায় দেশজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। ২০১৮ সালের পর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (H5N1) পুনরায় দেখা দেওয়ায় প্রাণিসম্পদ খাত ও খামারিরা চরম অনিশ্চয়তার মুখে। গত ১৩ মার্চ সংক্রমণ ধরা পড়লেও বিষয়টি সর্বসমক্ষে আসতে সময় লেগেছে।

কী ঘটেছে? 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার নিশ্চিত করেছেন, যশোরের খামারে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ-এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। প্রাদুর্ভাব রোধে খামারের ৩,৯৭৮টি মুরগির মধ্যে ১,৯০০টি মারা গেছে, বাকিগুলোকে দ্রুত মেরে ফেলা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থা (OIE) এর সাথে সমন্বয় করে তদন্ত চলছে।  

গুরুত্ব কেন?

- ২০০৭ থেকে পুনরাবৃত্তি: বাংলাদেশে প্রথম বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয় ২০০৭ সালে, যা পরবর্তীতে ২০১৩, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ফিরে এসেছিল। প্রতি প্রাদুর্ভাবে লাখো মুরগি ধ্বংস করা হয়, ক্ষতির মুখে পড়েন হাজারো খামারি।  

- অর্থনৈতিক ঝুঁকি: পোল্ট্রি শিল্প দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের ২০% অবদান রাখে। বার্ড ফ্লু ছড়ালে মুরগির দাম বাড়া, সরবরাহ কমা এবং রপ্তানি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।  

- মানুষের জন্য ঝুঁকি: ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম মানুষের দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। যদিও এখনও মানুষ-to-মানুষ সংক্রমণের প্রমাণ নেই, তবু সতর্কতা জরুরি।  

খামারিদের দুশ্চিন্তা:  

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, "ইতিমধ্যেই ডলার সংকট, ফিডের দাম বৃদ্ধি ও বাজার অস্থিরতায় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত। এখন বার্ড ফ্লু যেন শেষ কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।" তাঁর দাবি:  

- আক্রান্ত এলাকায় দ্রুত টাস্কফোর্স গঠন  

- অসুস্থ মুরগি বাজারজাতকরণে কঠোর নজরদারি  

- ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য জরুরি আর্থিক সহায়তা  



কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?  

১. জরুরি প্রতিরোধ: যশোরের খামারকে কোয়ারেন্টাইন করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।  

২. নজরদারি: দেশের অন্যান্য খামারে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো হয়েছে।  

৩. সচেতনতা: খামারিদের জন্য বায়োসেফটি প্রোটোকল জোরদার করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।  

বিশ্ব প্রেক্ষাপট:

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার গত দুই বছরে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবে ১০ কোটির বেশি পোল্ট্রি হারিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পাখির অভিবাসনের সাথে এই ভাইরাসের সম্পর্ক থাকায় বাংলাদেশকেও সতর্ক থাকতে হবে।  

সমাপ্তি: সময় এখনই:  

এই প্রাদুর্ভাব যেন ২০০৭-এর মতো ধ্বংসযজ্ঞে রূপ না নেয়, সে জন্য সরকার, গবেষক ও খামারিদের সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন। দ্রুত টিকা প্রদান, ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ এবং জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি মূল্যায়ন—এই তিন fronts-এ এগোতে হবে। নইলে পোল্ট্রি শিল্পের পাশাপাশি দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়বে।

নবীনতর পূর্বতন