Top News

আলু রপ্তানি বাড়ানোর দাবি, কিন্তু কৃষক কবে পাবে ন্যায্য দাম?

 



বাম্পার ফলনের পরও আলু চাষীদের দুর্ভোগ: সংরক্ষণ ও মূল্য সংকটে বিপর্যস্ত কৃষকরা।

দেশের উত্তরাঞ্চলের এক আলু চাষী গত কয়েক মাস ধরে রেকর্ড ফলনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ৯০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে তিনি আশা করেছিলেন ভালো মুনাফার। কিন্তু বর্তমান বাজারদর দেখে তার মুখে এখন শুধু হতাশা। "প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে ২০ টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১৩ টাকায়। বিঘাপ্রতি ৩৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে," বলছিলেন তিনি।

এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু এই বাড়তি উৎপাদন কৃষকদের জন্য বয়ে আনছে নতুন দুর্ভোগ। গত কয়েক মাস আগেও যখন বাজারে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৮০ টাকায় পৌঁছেছিল, তখন দাম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল কর্তৃপক্ষকে। আজ সেই একই পণ্য কৃষকরা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন উৎপাদন খরচেরও নিচে।

ক্ষেত থেকে বাজার পর্যন্ত: চাষীদের বেদনাদায়ক গল্প:

মুন্সিগঞ্জ, মেহেরপুর এবং বগুড়া - এই তিন জেলার আলু চাষীদের মুখে একই বেদনার গল্প। মুন্সিগঞ্জের এক কৃষক জানান, "ফলন ভালো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দাম না পেয়ে আমরা ধরা খেয়ে গেছি।" মেহেরপুরের আরেক চাষী বলেন, "প্রতি কেজিতে ৮ টাকা লোকসান! এভাবে আমরা কীভাবে টিকব?"

মূল সমস্যা শুরু হয় সংরক্ষণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতায়। মুন্সিগঞ্জ জেলায় এ বছর প্রায় ১০.৫ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় হিমাগারগুলোতে সংরক্ষণ ক্ষমতা এর অর্ধেকেরও কম। বগুড়ার এক কৃষক অভিযোগ করেন, "হিমাগার মালিকরা এখন কেজিপ্রতি ৮ টাকা ভাড়া চাইছেন, আগে যা ছিল ৪-৫ টাকা। এছাড়া অগ্রিম টাকা দাবি করছে তারা।"

হিমাগার মালিকদের অবস্থান:

হিমাগার ব্যবসায়ীরা তাদের ভাড়া বৃদ্ধিকে সমর্থন করে বলছেন, "বিদ্যুৎ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা বাধ্য হয়েই ভাড়া বাড়িয়েছি।" এক হিমাগার মালিক জানান, "আমরা আগে লোকসান দিয়ে কম ভাড়া নিতাম। এখন প্রকৃত খরচই আদায় করছি।"

এদিকে সরকার হিমাগার ভাড়া কেজিপ্রতি ৬ টাকা ৭৫ পয়সায় নির্ধারণ করেছে। তবে এই সিদ্ধান্তেও হিমাগার সংকটের স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্লেষকদের মতামত:

এক অর্থনীতিবিদের মতে, "এই সংকটের মূল কারণ সরকারের সমন্বয়হীনতা। প্রতি বছরই আমরা একই সমস্যা দেখছি - ফসলের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।" তিনি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সরকারি উদ্যোগে ফসল ক্রয়, সংরক্ষণ ও রপ্তানি বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

সরকারি পদক্ষেপ ও এর সীমাবদ্ধতা:

কৃষি কর্তৃপক্ষ হিমাগার ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক সংরক্ষণ কক্ষ নির্মাণ এবং রপ্তানি বৃদ্ধির কথা বলছে। ইতিমধ্যে কিছু আলু বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কৃষকদের মতে, এসব উদ্যোগ এখনও অপর্যাপ্ত।



সম্ভাব্য সমাধানের পথ:

১. সংরক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা: সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে হিমাগার সংখ্যা বাড়ানো

২. ডাটাভিত্তিক পরিকল্পনা: মৌসুমভিত্তিক চাষাবাদের সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন

৩. বাজার ব্যবস্থাপনা: উদ্বৃত্ত পণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা করা

৪. কৃষক সক্ষমতা বৃদ্ধি: প্রাকৃতিক উপায়ে ফসল সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ প্রদান

চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ:

ফসল ভালো হওয়ার পরও কৃষকদের দুর্ভোগ লাঘব করতে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা উদ্বেগজনক। আলুর বর্তমান সংকট কৃষি খাতের গভীর কাঠামোগত সমস্যারই প্রতিচ্ছবি। কৃষকদের মুখে এখন একটাই প্রশ্ন: "আমাদের এই সংগ্রামের শেষ কবে?"

---  

প্রতিবেদন: নবজাগরণ টিম

নবীনতর পূর্বতন