মিয়ানমারে ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩০ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার এক নারীর অদম্য সংগ্রাম।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক সংকটের মাঝে এক টুকরো আশার আলো.
[মান্দালয়, মিয়ানমার] ৭.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল মিয়ানমার। ধসে পড়েছিল বহুতল ভবন, উড়ালসড়ক, হাসপাতাল। মৃতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে, তবুও উদ্ধারকর্মীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৩০ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এক নারীকে। তার এই বেঁচে ওঠা যেন প্রাণের জয়গান।
ধ্বংসের মাঝে এক অদম্য জীবনের গল্প।
শনিবার সকালে মান্দালয়ের একটি ধসে পড়া অ্যাপার্টমেন্টের ধ্বংসস্তূপ থেকে স্ট্রেচারে করে উদ্ধার করা হয় ৩০ বছর বয়সী ওই নারীকে। তার স্বামী উদ্ধারকারীদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। স্ত্রীকে দেখামাত্রই তিনি জড়িয়ে ধরেন, চোখে অশ্রু। এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "প্রথমে ভাবিনি সে বাঁচবে... এখন আমি খুব খুশি।"
এই উদ্ধার অপারেশন চলাকালে আরও ৯০ জনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন উদ্ধারকারী দল। কিন্তু সময় যত যাচ্ছে, আশঙ্কা বাড়ছে—ভূমিকম্পপরবর্তী ধস ও আফটারশকের (পরবর্তী কম্পন) কারণে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
গৃহযুদ্ধের দেশে নতুন আঘাত:
মিয়ানমার ইতোমধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত। এই ভূমিকম্প দেশটির মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে। ত্রাণকার্য ব্যাহত হচ্ছে—বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। রাজধানী নেপিদোতে রাস্তা মেরামতের কাজ চললেও বেশিরভাগ এলাকায় এখনও জীবনযাত্রা অচল।
ভূমিকম্পের তাণ্ডবলীলা:
শুক্রবার দুপুরে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মান্দালয়ের খুব কাছেই। পরবর্তীতে ৬.৪ মাত্রার শক্তিশালী আফটারশক আঘাত হানে, যা অবকাঠামোকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, সেতু—কিছুরই রক্ষা হয়নি।
সময় এখন মানবতার:
প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনো সীমানা মানে না, রাজনৈতিক সংঘাতও তাকে থামাতে পারে না। মিয়ানমারের এই সংকটে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা জরুরি। কারণ, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেক প্রাণ প্রতীক্ষারত—যাদের জন্য প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান।
শেষ কথায়:
প্রকৃতির রোষে বিপর্যস্ত মিয়ানমার, কিন্তু মানুষের সংগ্রামী চেতনা আজও অপরাজিত। ৩০ ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপে আটকে থেকে বেঁচে ওঠা সেই নারী শুধু একটি জীবন নয়—সবাইকে দিয়েছে আশার বার্তা।