চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের ঐতিহাসিক বৈঠক: দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নতুন অধ্যায়।
বেইজিং, শুক্রবার – চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যকার এক গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ বৈঠক আজ বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৈঠকটিকে "অত্যন্ত সফল" আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন।
সমর্থন ও সহযোগিতার বার্তা:
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের নেতৃত্বকে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, চীন বাংলাদেশে উৎপাদন শিল্প স্থানান্তরকে উৎসাহিত করবে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশের উত্থাপিত কিছু জরুরি বিষয়—যেমন চীনা ঋণের সুদের হার কমানো এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা—চীন ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে বলে জানানো হয়।
গঠনমূলক আলোচনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যকার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতার রূপরেখা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তাঁর সামাজিক ব্যবসা ও টেকসই উন্নয়নের মডেল নিয়ে চীনের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন, যা চীনের "বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ" (বিআরআই)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট সি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কৌশলগত সম্পর্ককে আরও গভীর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের তাৎপর্য:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম কোনো দেশে দ্বিপক্ষীয় সফর, যা বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। চার দিনের এই সফরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন সহযোগিতার পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
সমাপ্তি: একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার:
এই বৈঠক শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সেতুবন্ধন রচনার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, আর এই সফল আলোচনা সেই সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।