শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট কাটাতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চায় ডিবিএ:
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও অস্থিরতার শিকার। পুঁজিবাজারকে সংকট থেকে উদ্ধার করে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ হাউস মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। মঙ্গলবার সংগঠনটির সভাপতি সাইফুর ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়।
ডিবিএর মতে, গত ১৫ বছর ধরে শেয়ারবাজার চরম অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও তারল্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বাজারের আকার প্রায় ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে ২০২০ সালের পর থেকে ফ্লোর প্রাইস নীতির কারণে বাজারে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক তহবিল ব্যবস্থাপকরা পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, আর স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও ঝুঁকি নিতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন।
ডিবিএর চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের বর্তমান নীতিনির্ধারণী কাঠামোর মধ্যে থেকেই শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করতে হলে উচ্চমানের কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অংশীদারত্ব সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে আনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করা সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে ডিবিএ বলছে, দেশের অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে এবং আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন বজায় রেখেছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে, বাজারে তারল্য বাড়বে এবং নতুন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরি হবে।
ডিবিএ আরও বলেছে, শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট কাটাতে কেবল বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করলেই চলবে না, বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বাজার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও নিরীক্ষক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। এছাড়া, বাজারে নতুন নতুন আর্থিক পণ্য সংযোজন ও গুণগতমানসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে বাজারকে গতিশীল করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করে ডিবিএ। তাই পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী ও বিনিয়োগবান্ধব করতে প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি উদ্যোগ প্রয়োজন। যদি এখন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে শেয়ারবাজারের উন্নয়নের সম্ভাবনা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংগঠনটি।
পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ:
শেয়ারবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী করতে হলে কেবল সরকারি হস্তক্ষেপই যথেষ্ট নয়, বরং বাজারের অভ্যন্তরীণ সংস্কার প্রয়োজন। মানহীন আইপিও অনুমোদন, বাজারে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং স্বচ্ছতার অভাবের মতো সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। তাছাড়া, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বহুজাতিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকাভুক্তি জরুরি হয়ে উঠেছে।
ডিবিএর এই দাবি সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। শেয়ারবাজারে গুণগত পরিবর্তন আনতে হলে এখনই কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায়, দেশের আর্থিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ এ খাত আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত হতে পারে।