প্রতিবেদন: জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠকের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি
ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ – বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে এবং সম্প্রসারণের দিকে আগাতে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। রমনার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংলাপে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দৃষ্টি শুধু ভারত, চীন ও আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। তরুণ প্রজন্মকে তাদের দৃষ্টি আরও তীক্ষ্ণ করতে হবে এবং বিশ্বকে নতুনভাবে ভাবতে হবে।’’ তিনি এই মুহূর্তে রাশিয়া, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, জিব্রাল্টার প্রণালি এবং পানামা খালের দুই পাশের আমেরিকা পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বিস্তৃতির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্রনীতির নতুন দিক
গণ–অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির নতুন রূপান্তর জরুরি বলে উল্লেখ করেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কারো ওপর নির্ভরশীল নই, বরং আমরা একে অপরের প্রতি পরস্পর নির্ভরশীল।’’ তার মতে, বিশ্বের অন্য দেশগুলোর প্রতি বাংলাদেশের মনোভাব স্পষ্ট এবং তা সম্পর্কের নতুন ধারার সূচনা করবে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাংস্কৃতিক সম্প্রসারণ অপরিহার্য। ‘‘বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছাতে হবে এবং তা অবশ্যই বৈশ্বিক সংস্কৃতির অংশ হতে হবে,’’ বলেন তিনি।
বঙ্গোপসাগরে কৌশলগত গুরুত্ব
এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের সম্পদ এবং পানি রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশকে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে হবে।’’
মিয়ানমার ইস্যু নিয়ে একগুচ্ছ বিশ্লেষণ প্রদান করে তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমারকে স্থিতিশীল করতে বাংলাদেশের ভূমিকায় ঐকমত্য গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ এই কাজটি শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং কূটনৈতিক এবং সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
অর্থনৈতিক বন্দোবস্তের গুরুত্ব
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আকরাম হুসাইন এবং অন্যান্য নেতারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আকরাম হুসাইন বলেন, ‘‘যদি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত স্থাপন না হয়, তবে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সম্ভাবনা কম।’’
সমাপ্তি
জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দের এই আহ্বান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও পথ দেখানোর ইঙ্গিত দেয়। এটি একটি যুগান্তকারী সময়ের সূচনা হতে পারে, যেখানে দেশের পররাষ্ট্রনীতি এবং সাংস্কৃতিক সম্প্রসারণ এক সঙ্গে চলবে, এবং বিশ্বরাজনীতিতে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী ভূমিকা গ্রহণ করবে।
এখন সময় এসেছে, তরুণ প্রজন্মের শক্তি এবং দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণের, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যত গঠন করতে সহায়ক হবে।