২ ফেব্রুয়ারি :
কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সংঘাত: পাল্টা শুল্কে উত্তপ্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য:
নবজাগরণ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উত্তেজনার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৫% পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, এই নতুন শুল্কের আওতায় ১৫৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের মার্কিন পণ্য আসবে, যার মধ্যে রয়েছে বিয়ার, ওয়াইন, গৃহস্থালি সরঞ্জাম ও ক্রীড়া সামগ্রী। এ সিদ্ধান্ত এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে, যেখানে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫% এবং চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক বসানো হয়েছে।
কেন এই শুল্ক সংঘাত?
ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি, এই শুল্ক অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কিন্তু ট্রুডো সরাসরি এ যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, "আমরা এখানে আসতে চাইনি, আমরা এটি চাইনি। তবে কানাডিয়ানদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা দৃঢ় থাকব।"
কানাডার পাল্টা ব্যবস্থা
প্রথম দফায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যে শুল্ক কার্যকর হবে, যা আগামী মঙ্গলবার থেকে চালু হচ্ছে। পরবর্তী ২১ দিনের মধ্যে আরও ১২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য এই শুল্কের আওতায় আসবে।
পাল্টা শুল্কের তালিকায় রয়েছে:
১. বিয়ার, ওয়াইন, ফলমূল ও ফলের রস
২. পারফিউম, পোশাক, জুতা ও আসবাবপত্র
৩. গৃহস্থালি সামগ্রী ও ক্রীড়া সরঞ্জাম
৪. কাঠ, প্লাস্টিক ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পণ্য
এছাড়া, সরকারি ক্রয়নীতির ওপর অশুল্ক বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনাও করছে কানাডা।
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে প্রভাব
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের এই বাণিজ্য দ্বন্দ্ব বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়াবে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় ধরনের ধাক্কা দেবে।
উইলসন সেন্টারের কানাডা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্রিস্টোফার স্যান্ডস বলেন, "এই পাল্টা শুল্ক ব্যবস্থা উভয় দেশের জন্যই ধ্বংসাত্মক হতে পারে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।"
কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সম্পর্ক কতটা গভীর?
▪️ প্রতিদিন ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান হয়।
▪️ যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী কানাডা।
▪️ যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত মোট তেলের ৬১% আসে কানাডা থেকে।
শুল্কের প্রভাব সরাসরি জ্বালানি খাতেও পড়ছে। কানাডার অন্যান্য পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক বসানো হলেও তেলের ক্ষেত্রে হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১০%।
কূটনৈতিক টানাপোড়েনের ইঙ্গিত
কানাডা ইতোমধ্যে সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নয়নে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাজেট বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু ট্রুডো জানিয়েছেন, ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেননি।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন যদি পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তবে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে।
শেষ কথা
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু চলমান বাণিজ্য সংঘাত শুধু এই দুই দেশ নয়, বরং পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে এবং বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
বাণিজ্য যুদ্ধ কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়—এটি দুই পক্ষেরই ক্ষতি করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা কূটনৈতিক পথে সমাধান খুঁজবে, নাকি উত্তেজনা আরও বাড়বে।
— নবজাগরণ যুক্তরাষ্ট্র :