রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার প্রথম ধাপ: শান্তির পথে অগ্রগতি নাকি নতুন উত্তেজনার সূচনা?
নবজাগরণ ডেস্ক
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদে। এই বৈঠককে অনেকেই নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হিসেবে দেখছেন, তবে ইউক্রেনের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
শান্তি আলোচনা, কিন্তু শর্ত কঠোর
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনে ন্যাটোর শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি রাশিয়া কখনোই মেনে নেবে না। "অন্য কোনো পতাকার অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি কিছুই পরিবর্তন করে না। এটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য," তিনি বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ উপস্থিত ছিলেন। রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সহকারী ইউরি উশাকভ এবং সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ আলোচনায় অংশ নেন।
ইউক্রেনকে বাদ রেখেই সিদ্ধান্ত?
এই আলোচনায় ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যা দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে হতাশ করেছে। তুরস্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "আপনি ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আমরা চাই সবকিছু ন্যায়সঙ্গত হোক এবং আমাদের পেছনে কোনো গোপন চুক্তি না হোক।"
পশ্চিমা বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত
রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় নেতারা প্যারিসে জরুরি বৈঠকে বসেন, তবে তারা একমত হতে পারেননি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার বলছেন, যেকোনো শান্তিচুক্তির জন্য মার্কিন সমর্থন জরুরি, যাতে রাশিয়াকে ভবিষ্যতে হামলা থেকে বিরত রাখা যায়।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করাকে "সময় নষ্ট" বলে উল্লেখ করেছেন।
পোল্যান্ড ও ইতালিও কোনো সামরিক হস্তক্ষেপে আগ্রহ দেখায়নি।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি প্যারিস বৈঠকে বলেন, "ইউক্রেনে ইউরোপীয় সেনা মোতায়েন করা সবচেয়ে জটিল ও কম কার্যকর উপায় হতে পারে।"
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত?
বৈঠকের পর ল্যাভরভ জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একে অপরের দেশে রাষ্ট্রদূত পুনঃনিযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে, যা সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের ইঙ্গিত বহন করে। "আমরা একে অপরকে শুনেছি এবং বুঝেছি," তিনি বলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, "রাশিয়া সংঘাত সমাপ্তির জন্য একটি গুরুতর আলোচনায় যুক্ত হতে প্রস্তুত বলে আমরা নিশ্চিত। তবে সব পক্ষকেই কিছু না কিছু ছাড় দিতে হবে।"
শান্তির পথে এগোবে বিশ্ব, নাকি নতুন দ্বন্দ্বের সূচনা?
এই আলোচনাকে কেউ শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ বলছেন, আবার কেউ এটিকে রাজনৈতিক চাল হিসেবে দেখছেন। ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে কোনো দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি সম্ভব কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বিশ্ব কি একটি নতুন কূটনৈতিক সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে, নাকি এটি একটি সাময়িক বিরতি মাত্র? উত্তর সময়ই দেবে।