Top News

২০২৮ সালের পর সুইস সহায়তা বন্ধ: বাংলাদেশ কীভাবে সামাল দেবে?নবজাগরণ ডেক্স:

১-২-২০২৫:


সুইস উন্নয়ন সহযোগিতা বন্ধ: বাংলাদেশ কি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে?

নবজাগরণ প্রতিবেদক

সুইজারল্যান্ড, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী, ঘোষণা দিয়েছে যে তারা ২০২৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ, আলবেনিয়া ও জাম্বিয়ায় তাদের দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে। সুইস সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত তাদের বাজেট সংকোচনের অংশ এবং বৈদেশিক সহায়তার পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি কি কেবল বাজেট কাটছাঁটের মধ্যে সীমাবদ্ধ, নাকি এর পেছনে আরও গভীর কৌশলগত চিন্তা কাজ করছে?

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তন শুধু একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তাই এটাকে শুধুই সাময়িক একটি ধাক্কা হিসেবে দেখলে বিষয়টি পুরোপুরি বোঝা যাবে না।

সুইস সরকার হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নিল কেন?

সুইস ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স (FDFA)-এর মুখপাত্র পিয়ের-আলাঁ এল্টশিঙ্গার জানিয়েছেন, বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়নের পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্থানীয় চাহিদা এবং সুইস সহায়তার প্রভাব বিবেচনায় রেখে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এছাড়াও, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। অনেক উন্নত দেশই এ ধরনের উত্তরণের পর ধীরে ধীরে তাদের সহায়তা কমিয়ে দেয়, যাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করে আরও আত্মনির্ভরশীল হতে পারে।

তবে এখানেই প্রশ্ন আসে—এই সিদ্ধান্ত কি শুধুই বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হয়ে ওঠার কারণেই নেওয়া হলো, নাকি এর পেছনে আরও বৃহত্তর কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কৌশল কাজ করছে?



বাংলাদেশের জন্য কী কী প্রভাব পড়তে পারে?

সুইস উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে কয়েকটি খাতে—

১. শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন:

সুইস সহায়তার একটি বড় অংশ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় করা হতো। এই খাতে অর্থায়ন কমে গেলে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান তৈরির প্রচেষ্টায় বাধা আসতে পারে।

২. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা:

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সুইস সহায়তায় পরিচালিত বিভিন্ন জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্প হুমকির মুখে পড়তে পারে, যার ফলে বাংলাদেশকে বিকল্প অর্থায়ন খুঁজতে হবে।

৩. দারিদ্র্য বিমোচন ও নারী ক্ষমতায়ন:

সুইজারল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই সহায়তা কমে গেলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য চলমান সহায়তামূলক প্রকল্পগুলো ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

তবে সুইজারল্যান্ড জানিয়েছে, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং কিছু মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত প্রকল্পে তারা সহযোগিতা চালিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে সামাল দিতে পারে?

বিশ্লেষকদের মতে, সুইস সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও, এটি নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, দেশকে আরও আত্মনির্ভরশীল করা। কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে—

১. অভ্যন্তরীণ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার:

বাংলাদেশকে এখন বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজের সম্পদ আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। ট্যাক্স ব্যবস্থার উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সরকারি রাজস্ব আয় বাড়ে।

২. নতুন আন্তর্জাতিক অংশীদার খোঁজা:

সুইজারল্যান্ডের পরিবর্তে বাংলাদেশকে চীন, সৌদি আরব, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে আরও গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

৩. বেসরকারি বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন:

দেশীয় বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে, যাতে বিদেশি সহায়তা ছাড়াই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

৪. প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ:

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গবেষণা ও প্রযুক্তিতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকে।



শেষ কথা: চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সম্ভাবনা আছে

সুইস উন্নয়ন সহযোগিতা বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় পরিবর্তন। কিন্তু পরিবর্তন সবসময় খারাপ নয়, যদি সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া যায়।

বিশ্ব অর্থনীতির নতুন বাস্তবতায় বাংলাদেশকে এখন বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতার দিকে এগোতে হবে। নিজের অর্থনৈতিক শক্তিকে আরও সুসংহত করতে হবে এবং নতুন আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।

সুইস সহায়তা হয়তো ২০২৮ সালে বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে যাবে না—যদি আমরা নিজেদের পথ নিজেরা তৈরি করতে পারি।

নবীনতর পূর্বতন