Feb 3, 2025
যুক্তরাজ্যের কড়া পদক্ষেপ: শিশু যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত AI কনটেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর আইন:
নবজাগরণ ডেস্ক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) অপব্যবহার বিশ্বব্যাপী নৈতিক ও আইনগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। শিশু যৌন নির্যাতনের জন্য AI-নির্ভর কনটেন্ট তৈরি ও ছড়িয়ে দেওয়ার মতো জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধে যুক্তরাজ্য সরকার এবার বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার চারটি নতুন কঠোর আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে, যা শিশু যৌন নির্যাতন-সংক্রান্ত কনটেন্ট তৈরিতে AI-এর ব্যবহারের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
নতুন আইনের প্রধান দিকসমূহ:
১️. AI টুলের মাধ্যমে নিষিদ্ধ কনটেন্ট তৈরি ও বিতরণ:
যেসব সফটওয়্যার শিশুদের যৌন নির্যাতনের কনটেন্ট তৈরি, সংরক্ষণ বা বিতরণের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, সেগুলো পরিচালনা করা বেআইনি হবে। এ ধরনের অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড।
২. যৌন নির্যাতনের কৌশল শেখানো গাইডলাইন নিষিদ্ধ:
AI বা অন্যান্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের পদ্ধতি শেখানো কোনো গাইডলাইন রাখা বা বিতরণ করা বেআইনি হবে। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
৩. শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত ওয়েবসাইট বন্ধের কঠোর পদক্ষেপ:
যেসব ওয়েবসাইট শিশু যৌন নির্যাতনের কনটেন্ট শেয়ার করে বা অপরাধীদের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের সুযোগ দেয়, সেগুলো পরিচালনা করা বেআইনি হবে। এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
৪. সন্দেহভাজনদের ডিভাইস স্ক্যানের ক্ষমতা পাবে সীমান্ত কর্তৃপক্ষ:
যুক্তরাজ্যে প্রবেশের সময় সন্দেহভাজনদের ডিজিটাল ডিভাইস খুলে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা দেওয়া হবে বর্ডার ফোর্সকে। অপরাধের মাত্রার ওপর নির্ভর করে এর জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
AI-নির্ভর শিশু নির্যাতনের বিপজ্জনক উত্থান:
হোম সেক্রেটারি ইভেট কুপার নতুন আইন ঘোষণার সময় বলেন,
"AI এখন শিশুদের বিরুদ্ধে অনলাইন যৌন নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটি অপরাধীদের জন্য নির্যাতনকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।"
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক AI সফটওয়্যার বাস্তব চিত্রকে সম্পাদনা করে শিশুদের কৃত্রিমভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে। এমনকি, শিশুদের মুখ বসিয়ে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে, নিরীহ শিশুদের কণ্ঠস্বরও ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তাদের জন্য আজীবন মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টি করতে পারে।
ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (NCA) তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যে প্রতি মাসে ৮০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় শিশুদের অনলাইন যৌন নির্যাতনের অভিযোগে। এছাড়া, আনুমানিক ৮,৪০০০০ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অনলাইনে বা বাস্তবে শিশুদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া: আরও কঠোর আইন দরকার:
নতুন আইনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন অনলাইন অপরাধ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ক্লেয়ার ম্যাকগ্লিন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন,
"এই আইন গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এটি যথেষ্ট নয়। 'নুডিফাই' অ্যাপ নিষিদ্ধ করা উচিত এবং পর্নো ওয়েবসাইটে অপ্রাপ্তবয়স্কদের চরিত্রে উপস্থাপিত কনটেন্টের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।"
ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন (IWF) জানিয়েছে, AI-নির্ভর শিশুকেন্দ্রিক যৌন নির্যাতনের কনটেন্ট ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ৩৮০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
IWF-এর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নির্বাহী ডেরেক রে-হিল বলেন,
"এই ধরনের কনটেন্ট শিশুদের জন্য আরও বেশি হুমকি তৈরি করছে এবং অপরাধীদের আরও উৎসাহিত করছে।"
শিশু সুরক্ষা সংস্থা বার্নার্ডো’স-এর প্রধান নির্বাহী লিন পেরি বলেন,
"প্রযুক্তি যত দ্রুত উন্নত হচ্ছে, আইনকেও তত দ্রুত আপডেট করতে হবে। বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্ম শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে হবে এবং ওফকমকে 'অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট' কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে।"
সংসদে উঠছে "ক্রাইম অ্যান্ড পলিসিং বিল"
যুক্তরাজ্য সরকার এই নতুন আইনগুলোকে "ক্রাইম অ্যান্ড পলিসিং বিল"-এর অংশ হিসেবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পার্লামেন্টে উপস্থাপন করবে। সংসদে পাশ হলে এই আইনগুলো এক নতুন যুগের সূচনা করবে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির সঙ্গে আইনেরও আধুনিকায়ন জরুরি। এই নতুন পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে— শিশুদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস নয়।
প্রতিবেদন: নবজাগরণ