২৭ শে জানুয়ারি :
>>চীনের শিল্প খাতে মুনাফার অবনতি, জানুয়ারিতে পিএমআই সূচকেও ধস: অর্থনীতির সংকটের নতুন সংকেত-
চীনের শিল্পখাতে টানা তিন বছরের মুনাফার পতন: জানুয়ারির পিএমআই সূচকেও ধস, অর্থনীতির পথে শঙ্কার মেঘ
বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি চীনের শিল্প খাত যেন মন্দার ধাক্কায় দিশেহারা। ২০২৪ সালে চীনের শিল্প খাতের মুনাফা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। এর মাধ্যমে টানা তৃতীয় বছরের মতো মুনাফা হারিয়েছে দেশটি। এদিকে, জানুয়ারিতে শিল্প খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) ৫০-এর নিচে নেমে গেছে, যা অর্থনীতির নিম্নমুখী প্রবণতার উদ্বেগজনক ইঙ্গিত দেয়।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) জানিয়েছে, জানুয়ারির পিএমআই সূচক ৪৯ দশমিক ১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অথচ রয়টার্সের পূর্বাভাস ছিল, এটি হবে ৫০ দশমিক ১ পয়েন্ট। বিশ্লেষকদের মতে, চীনা লুনার নিউ ইয়ার উপলক্ষে শ্রমিকদের নিজ শহরে ফিরে যাওয়া এবং ছুটির মৌসুমের কারণে এই পতন ঘটেছে।
টানা পতনের গল্প: শিল্প খাতের হোঁচট
চীনের শিল্প খাত গত কয়েক বছর ধরেই মুনাফার চাপে রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্নতা এই খাতকে দুর্বল করে তুলেছে। টানা তিন মাস পিএমআই সূচকে উন্নতি দেখা গেলেও জানুয়ারিতে এই ধস বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে।
গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ হুই শান বলেন, “অভিবাসী শ্রমিকদের শহরে ফেরার কারণে উৎপাদন কার্যক্রম ধীর হয়ে যায়। এটি চীনা নববর্ষের সময়ের একটি সাধারণ প্রবণতা, তবে এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য শঙ্কার বার্তা।”
ব্লু চিপ শেয়ারে প্রভাব
ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস জানায়, জানুয়ারির পিএমআই প্রকাশের পর চীনের ব্লু চিপ শেয়ার সূচক সিএসআই ৩০০ তাত্ক্ষণিকভাবে পতনের মুখে পড়ে। যদিও দিনের শুরুতে কিছুটা উন্নতি দেখা গিয়েছিল, পিএমআই সূচকের খবর বিনিয়োগকারীদের মনোবল নষ্ট করেছে।
মৌসুমী চ্যালেঞ্জ না দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা?
পিএমআই সূচকের পতনকে অনেকেই মৌসুমী ধাক্কা হিসেবে দেখছেন। চীনের পরিসংখ্যান ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ঝাও কিংহে বলেন, “প্রধান কাঁচামাল ক্রয় ও বিক্রয়ের সূচক কিছুটা উন্নতি দেখাচ্ছে। নববর্ষের ছুটির পর বেশির ভাগ উৎপাদক ব্যবসা সম্প্রসারণের ব্যাপারে আশাবাদী।”
তবে শিল্প খাতের এই চ্যালেঞ্জকে একেবারেই হালকাভাবে নিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের গবেষক ব্রুস প্যাং বলেন, “যদিও সামগ্রিক চাহিদার প্রবণতা ইতিবাচক, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই খাতকে সচল রাখতে নীতি সহায়তার প্রয়োজন।”
পরিষেবা খাতের ইতিবাচক দিক
পিএমআই সূচকের পতন সত্ত্বেও চীনের পরিষেবা খাত কিছুটা ভরসা জোগাচ্ছে। জানুয়ারিতে পরিষেবা উপখাতের পিএমআই বেড়ে ৫০ দশমিক ৩ পয়েন্টে পৌঁছেছে। গণপরিবহন, হোটেল, খাদ্য ও পানীয় খাতে চাহিদা বাড়ায় এই খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে উৎপাদনবহির্ভূত নন-ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই সূচক কমে ৫০ দশমিক ২ পয়েন্ট হয়েছে, যা পরিষেবা ও নির্মাণ খাতে অস্বস্তি তৈরি করেছে।
কীভাবে চীনের শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়াবে?
বিশ্লেষকদের মতে, চীনের শিল্প খাতকে সচল রাখতে এখনই সুনির্দিষ্ট আর্থিক নীতি সহায়তার প্রয়োজন। উৎপাদন কার্যক্রমে গতি আনতে ঋণ সুবিধা বাড়ানো, সরবরাহ শৃঙ্খলকে আরও সুসংহত করা এবং রপ্তানি বাজারকে সম্প্রসারণে জোর দিতে হবে।
চীনের বর্তমান শিল্প খাতের এই চ্যালেঞ্জ কেবল দেশটির জন্য নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ব তাকিয়ে আছে চীনের নীতিনির্ধারকদের দিকে, যারা হয়তো সামনে অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেবেন।
(নবজাগরণ ডেস্ক)