Top News

সিরিয়ার রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়: অন্তর্বর্তী সরকার কী করতে যাচ্ছে? নবজাগরণ ডেস্ক:

 ১-২-২০২৫:


সিরিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম: নতুন আইনসভা ও অর্থনৈতিক সংস্কার

নবজাগরণ ডেস্ক:

সিরিয়ার রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে দেশটি। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অভিযানে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা দ্রুত পরিবর্তন আনতে শুরু করেছেন। নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দেশ পরিচালনার জন্য তিনি একটি ছোট আইনসভা গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

সংবিধান স্থগিত, নতুন আইনসভা গঠন

গত বুধবার সিরিয়ার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি সংবিধান স্থগিত করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে দেওয়া প্রথম ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা জানান, শূন্যস্থান পূরণের জন্য একটি ছোট আইনসভা গঠন করা হবে। এই আইনসভা নতুন সংবিধান কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে।

তিনি জাতীয় সংলাপ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করব, যা সিরিয়ার জনগণকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে।’’ একই সঙ্গে তিনি নাগরিক শান্তি ও দেশের আঞ্চলিক ঐক্য রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন।

আল-শারা জানিয়েছেন, একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে চার বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

আসাদপন্থী দল বিলুপ্ত, অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ

আল-শারার সরকার ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল-আসাদের রাজনৈতিক দল বাথ পার্টি বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি, দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকার এক-তৃতীয়াংশ সরকারি চাকরি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দীর্ঘ ৫০ বছর আসাদ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি খাতে ছাড়ার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। সিরিয়ার নতুন অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী বাসিল আবদেল হান্নান জানান, ‘‘আমরা এখন প্রতিযোগিতামূলক মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে যাচ্ছি।’’



সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১০৭টি লোকসানি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে জ্বালানি ও পরিবহন খাত রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আবাজিদ দাবি করেন, ‘‘সরকারি তালিকায় থাকা ১৩ লাখ কর্মীর মধ্যে প্রায় ৪ লাখই ভুতুড়ে নাম, যাদের বাস্তবে কোনো কাজ নেই।’’

প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ

সিরিয়ার নতুন সরকার একদিকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে, অন্যদিকে অর্থনীতিকে চাঙা করতে বড় ধরনের সংস্কার করছে। তবে সরকারি চাকরিবিলুপ্তির ফলে বিক্ষোভের আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি, আসাদপন্থী গোষ্ঠীগুলোর প্রতিরোধও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

সিরিয়ার জনগণের জন্য এটি এক নতুন অধ্যায়। তবে এই পরিবর্তন দেশের ভবিষ্যৎকে কোন পথে এগিয়ে নেবে, তা নির্ভর করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের দক্ষতার ওপর।


[নবজাগরণ - আন্তর্জাতিক ডেস্ক]

নবীনতর পূর্বতন