১-২-২০২৫ :
সবেতনে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সমাবেশ:
নবজাগরণ ডেস্ক: সবেতন ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি, যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতি এবং প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটি।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের পোশাক শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হলেও মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সরকারি পর্যায়ে নারীদের ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির সুযোগ থাকলেও, পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে অনেক নারী বাধ্য হয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, যা কর্মসংস্থানের স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ শ্রমশক্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।
১. শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলেও, এখানে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে বাধা, যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কার্যকর নীতির অভাব এবং ন্যায্য মজুরির মতো বিষয়গুলো শ্রমিকদের জন্য বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ বলেন, “বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে শ্রম সংস্কার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন বাস্তবায়ন অপরিহার্য। সারা বিশ্বে শ্রমিকরা যেখানে ন্যায্য মজুরি ও ট্রেড ইউনিয়নের সুবিধা পাচ্ছেন, সেখানে বাংলাদেশে শ্রমিকদের এসব মৌলিক অধিকার এখনও নিশ্চিত হয়নি।”
২. ট্রেড ইউনিয়ন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দাবি
শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রম আইন সংস্কার এখন সময়ের দাবি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) কনভেনশন অনুযায়ী, শ্রমিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। অথচ দেশে এখনো ইপিজেড ও অন্যান্য শিল্পখাতে ভিন্ন আইন প্রয়োগের ফলে শ্রমিকদের এই অধিকার খর্ব হচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, “নারী শ্রমিকদের জন্য ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি বাধ্যতামূলক করা না হলে কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ কমে যাবে, যা দীর্ঘমেয়াদে শিল্পখাতের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
৩. বিক্ষোভ থেকে উত্থাপিত অন্যান্য দাবি
শ্রম আইনের নতুন অধ্যাদেশে শ্রমিকদের প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ
মজুরি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার
বেক্সিমকোসহ লে-অফ করা কারখানাগুলো খুলে দেওয়া অথবা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করা
৪. শেষ কথা:
বাংলাদেশের পোশাকশিল্প বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করলেও, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ অন্যান্য শ্রম অধিকার নিশ্চিত না করলে, শুধু শ্রমিকরাই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো শিল্পখাত। তাই এই দাবিগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি।
---
(নবজাগরণ – আপনার সত্যের পথে জাগরণ)