২৯শে জানুয়ারি :
রেলের চাকা সচল, রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার: দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতিতে স্বস্তি
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। রাতের আঁধারে আলো ছড়াল রেলওয়ের সংকটে। রানিং স্টাফদের বহুদিনের দাবির প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের বাসভবনে গভীর রাতে এক ঐতিহাসিক বৈঠকের মাধ্যমে অবশেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।
সিদ্ধান্তের পেছনের হিসাব-নিকাশ:
মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত আসে। রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান জানান, “উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, আগামীকালের (বুধবার) মধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাদের দাবি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আগের সব সুবিধা বহাল থাকবে। আমরা এখন থেকেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করছি। রানিং স্টাফ ভাইদের অনুরোধ করছি, তাঁরা যেন কাজে ফিরে যান।”
এই ঘোষণায় রেলওয়ের অচলাবস্থা কাটিয়ে ফের সচল হতে যাচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই পরিবহন সেবা। তবে এই সমঝোতার পেছনে যে দীর্ঘ সময়ের আন্দোলন ও সংকট ছিল, তা নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে অনেককেই।
কেন এই ধর্মঘট?
রানিং স্টাফদের আন্দোলন কেবল তাঁদের অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবি নিয়ে। গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শকরা সাধারণত দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য তাঁদের বেতনভুক্ত সুবিধার বাইরে অতিরিক্ত ‘রানিং অ্যালাউন্স’ দেওয়ার নিয়ম ছিল।
কিন্তু ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় তাঁদের এই সুবিধা সীমিত করা হয়। ফলে অবসরের পর পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা কমে যাওয়ার পাশাপাশি তাঁদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। রানিং স্টাফরা তাঁদের পূর্বের সুবিধাগুলো পুনরায় কার্যকর করার দাবি জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন।
দাবি আদায়ের উত্তপ্ত প্রেক্ষাপট
গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পুরোনো রেলস্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন আলটিমেটাম দিয়েছিল—২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয় যে, সোমবার মধ্যরাতের পর থেকেই রাজধানীর কমলাপুরসহ বিভিন্ন স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। এতে হাজারো যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েন। স্টেশনগুলোতে যাত্রীরা হতাশায় ভোগেন। অনেকে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় রাত পার করেন।
সমাধানের পথে উদ্যোগ
এই সংকট নিরসনে এগিয়ে আসেন বিভিন্ন পক্ষ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, “শ্রমিক নেতাদের নিয়ে রেল উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা বৈঠকে বসেছি। অবশেষে সমাধানের পথে এসেছে এই সংকট।”
এই উদ্যোগে শ্রমিক নেতারা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছ থেকে দ্রুত সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি পান। তাঁরা জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হবে।
যাত্রীরা কি পেলেন সমাধান?
কর্মবিরতির কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ছিলেন। বিশেষ করে যারা অফিস, চিকিৎসা কিংবা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাত্রা করছিলেন, তাঁদের দুর্ভোগের শেষ ছিল না।
তবে রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে। রেলওয়ের কর্মযজ্ঞ আবারও সচল হওয়ার খবর যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফেরাবে।
ভবিষ্যৎ সংকট এড়াতে করণীয়
এই সংকটের সমাধান সাময়িক স্বস্তি আনলেও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য রেলওয়ে ব্যবস্থাপনায় কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। রানিং স্টাফদের দাবিগুলো পূরণ করার পাশাপাশি তাঁদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি।
দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে রেলপথের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এই গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত যেন কখনো অচলাবস্থার শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
নবজাগরণ
বিশ্বস্ত সংবাদের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।