Top News

প্রবাসী ভোটারদের জন্য তিন বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে ভাবছে নির্বাচন কমিশন:নবজাগরণ জাতীয় :

 ৩০ শে জানুয়ারি:



সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে নতুন উদ্যোগ আইনি জটিলতা দূর করতে ইসির প্রস্তাব:

বাংলাদেশের সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে আইনি জটিলতা দূর করতে উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমান আইনের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সংশোধনী আনতে সরকারকে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। তবে তারা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবে বলে জানিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইসির এক বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, সীমানা নির্ধারণ ছাড়াও ভোটার তালিকা আইন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা এবং সাংবাদিকদের জন্য নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের নিয়মাবলি পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

সীমানা নির্ধারণে বিদ্যমান সমস্যাগুলো কী?

বর্তমান আইনে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূলত জনসংখ্যাকে প্রধান বিবেচ্য ধরা হয়। তবে ইসি মনে করছে, শুধুমাত্র জনসংখ্যা নির্ভর পদ্ধতিতে সীমানা নির্ধারণ করলে শহরাঞ্চলে আসনসংখ্যা বেড়ে যাবে, আর গ্রামীণ ও কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় তা কমে যাবে। এর ফলে সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে উঠবে।

নির্বাচন কমিশন তাই নতুনভাবে আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থান, এবং সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন উপাদান বিবেচনায় আনার পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি আইনের একটি উপধারায় ছাপার ভুল সংশোধনের জন্যও প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।



সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও সম্ভাব্য সংঘর্ষ:

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও সীমানা নির্ধারণ আইন নিয়ে একটি খসড়া তৈরি করেছে। তবে সেই সুপারিশ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ইসিও নিজেদের মতো করে সংশোধন করছে। ফলে দুটি খসড়ার মধ্যে পার্থক্য দেখা দিলে কোনটি কার্যকর হবে, তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কমিশনার আবুল ফজল বলেন, "এখানে সাংঘর্ষিক হওয়ার সুযোগ নেই। ইসি তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় কাজ করছে, যা শেষ পর্যন্ত সরকারকে সহায়তা করবে।" তিনি আরও জানান, ইসি পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করছে এবং প্রয়োজন হলে সরকারকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাবে।

প্রবাসী ভোটারদের জন্য নতুন পরিকল্পনা:

সভায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া আরও সহজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে তিনটি বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে ভাবছে ইসি—

১.পোস্টাল ব্যালট – ডাকযোগে ভোট পাঠানোর ব্যবস্থা:

২. প্রক্সি ভোটিং – মনোনীত প্রতিনিধি দিয়ে ভোট প্রদান:

৩.অনলাইন ভোটিং – ডিজিটাল মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ:

এই তিনটি পদ্ধতির কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

ইসির স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ:

সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে বলে সিইসি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ইসির ক্ষমতা কতটা সংরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে কমিশনার আবুল ফজল বলেন, "আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এটি জাতীয় দাবি, তাই সংস্কার প্রয়োজন। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইসি তাদের পর্যবেক্ষণ সরকারকে জানাবে।"



পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

এখন পর্যন্ত ৪১টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য ২৪৮টি আবেদন জমা পড়েছে। ইসি পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পরই ইসি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে।

সীমানা নির্ধারণ: ন্যায়সঙ্গত প্রতিনিধিত্ব নাকি রাজনৈতিক সমীকরণ?

নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র জনসংখ্যা নির্ভর পদ্ধতি নয়, বরং ভৌগোলিক ও সামাজিক বাস্তবতা মাথায় রেখে আসনের সীমানা নির্ধারণ করা উচিত। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া এবং সরকারের অবস্থান কী হয়, সেটিই মূল বিষয়।

দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন কতটা সফল হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।


 নবজাগরণ – সত্যের সন্ধানে।

নবীনতর পূর্বতন