২৯ শে জানুয়ারি :
বেক্সিমকো: আর্থিক সংকটে ধুঁকছে, উৎপাদন বন্ধের প্রভাবে শেয়ারহোল্ডারদের মাথায় হাত:
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট গ্রুপ বেক্সিমকো লিমিটেড আজ গভীর আর্থিক সংকটের মুখোমুখি। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৪) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৫৮ পয়সা লোকসান হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের শেয়ারপ্রতি ৮২ পয়সা আয়ের চিত্রকে ম্লান করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ৭৮ পয়সা লোকসান হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের শূন্য ৩ পয়সা আয়ের তুলনায় এক কথায় বিপর্যয়কর।
উৎপাদন বন্ধ: সংকটের মূল কারণ:
বেক্সিমকোর এই আর্থিক বিপর্যয়ের পেছনে মূল কারণ হলো উৎপাদন বন্ধ। কোম্পানিটি জানিয়েছে, ব্যাংকঋণের সুবিধা না পাওয়ায় তাদের কার্যক্রম প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে কোনো ব্যাংকই বেক্সিমকোর এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) বা ঋণপত্র খোলেনি। এর ফলে পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং সুতা ও কাপড় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয় কোম্পানিটি। এ পরিস্থিতিতে বেক্সিমকো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
শেয়ারহোল্ডারদের মাথায় হাত:
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ বেক্সিমকোর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৮২ টাকা ৫৭ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ের ৯৩ টাকা ৯৮ পয়সার তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কম। শেয়ারহোল্ডাররা এখন উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন, কারণ কোম্পানির আর্থিক অবস্থার উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনেক শেয়ারহোল্ডার তাদের বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত।
ঋণখেলাপির অভিযোগ: বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে বড় কেলেঙ্কারি:
বেক্সিমকো বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির চেয়েও বড় কেলেঙ্কারি করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। টেক্সটাইল ও অ্যাপারেলস সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে গ্রুপটি ২৮ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। তবে, বেক্সিমকো শিল্পপার্কের আওতাধীন ৩২টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টিই অস্তিত্বহীন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অস্তিত্বহীন কোম্পানির বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে।
সরকারের জরুরি সিদ্ধান্ত:
এ পরিস্থিতিতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের জরুরি বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে:
১. লে-অফ করা ১৩টি কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া।
২. বেক্সিমকোর রিসিভারকে বরখাস্ত করা।
৩. ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর কাছে বন্ধক থাকা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ার বিক্রি করে লে-অফ কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যবস্থা করা।
বেক্সিমকোর ভবিষ্যৎ: সংশয় ও সম্ভাবনা:
বেক্সিমকোর আর্থিক সংকট শুধু কোম্পানির জন্য নয়, পুরো শিল্পখাত ও অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ কোম্পানিটিকে পুনরুদ্ধারের পথে নিয়ে যেতে পারে কি না, তা এখন শেয়ারহোল্ডার ও সাধারণ মানুষের মূল প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেক্সিমকো যদি দ্রুত ঋণ সুবিধা পায় এবং উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে পারে, তবে হয়তো এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। কিন্তু তা না হলে, বাংলাদেশের কর্পোরেট ইতিহাসে এটি একটি বড় ধস হিসেবে চিহ্নিত হবে।